আসসালামু আলাইকুম, আশা করছি সকলেই অনেক ভালো আছেন।
আজকের আর্টিকেলে আমি ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। ওয়ার্ডপ্রেস কি? কেন শিখব ওয়ার্ডপ্রেস? ওয়াডপ্রেস এর ক্যারিয়ার কেমন?
তো চলুন শুরু করি
এখন প্রত্যেকটা কোম্পানিরই একটা করে ওয়েবসাইট থাকে। আর এই ওয়েবসাইট গুলো বেশির ভাগই ওয়াডপ্রেস দিয়ে তৈরি করা হয়। ওয়ার্ডপ্রেস এখন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় একটি সিএমএস (CMS)। বেশিরভাগ মানুষই এই সি এম এস টি ব্যবহার করে তাদের ওয়েবসাইট বানানোর জন্য।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে ওয়ার্ডপ্রেস রিলেটেড প্রচুর কাজ রয়েছে। Fiverr, Upwork, Freelancer, Peopleperhour এসব মার্কেটপ্লেসে ওয়াডপ্রেস এর প্রচুর কাজ পাওয়া যায়, কারণ হচ্ছে যদি কোন ব্যক্তি একটা ওয়েবসাইট বানানোর চিন্তা মাথায় আনে তখন সে ওয়ার্ডপ্রেস দিয়েই বানাবে এই চিন্তাটাও তার থাকে।
সুতরাং ওয়ার্ডপ্রেস শিখলে আমরা ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে একজন ওয়েব ডেভলপার হিসেবে কাজ করতে পারবো এবং যদি আমরা নিজের জন্য কোন ওয়েবসাইট বানাতে চাই তাও আমরা ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে বানাতে পারবো।
ওয়ার্ডপ্রেস কি?
ওয়ার্ডপ্রেস হচ্ছে একটি CMS (Content Management System) যার মাধ্যমে যেকোনো ধরনের ওয়েবসাইট বানানো যায়, প্রথমে ওয়ার্ডপ্রেস শুরু হয়েছিল ব্লগ ওয়েবসাইট দিয়ে, মানুষ ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে Blog, News টাইপের ওয়েবসাইট বানাতো, আর এখন ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে Portfolio, Construction, eCommerce, Education ইত্যাদি যেকোনো ধরনের ওয়েবসাইট বানানো যায়।
ওয়ার্ডপ্রেস ছাড়াও মার্কেটে অনেক CMS রয়েছে যেমন Drupal, Joomla, Ghost, Shopify ইত্যাদি আরো অনেক CMS রয়েছে যেগুলো দিয়ে ওয়েবসাইট বানানো যায়, কিন্তু Wordpress হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি CMS, বেশিরভাগ ওয়েবসাইটই ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরি করা হয়।
যেকোনো ওয়েবসাইটের একটি কন্ট্রোল প্যানেল বা ডেশবোর্ড লাগে, তো কন্ট্রোল প্যানেল বানাতে প্রচুর খরচ লেগে যায়, যা কেউই চাইবে না এত টাকা খরচ করে একটা কন্ট্রোল প্যানেল বানানো, তাই এক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রেস কে ব্যবহার করা হয়, কারণ ওয়ার্ডপ্রেস ফ্রিতেই ওয়েবসাইটের কন্ট্রোল প্যানেল বা ডেশবোর্ড প্রভাইড করে।
কিভাবে আমরা ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করব?
ওয়ার্ডপ্রেসের সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য সর্বপ্রথম আমাদের ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করে নিতে হবে এবং হোস্টিং কোম্পানির সাথে কানেক্ট করে নিতে হবে। ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টল করার জন্য ওয়ার্ডপ্রেসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট wordpress.org এ যেতে হবে, তারপর সেখান থেকে Get Wordpress বাটনে ক্লিক করে ওয়ার্ডপ্রেসের লেটেস্ট ভার্সনটি ডাউনলোড করে নিতে হবে।
ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট বানাতে হলে আমাদেরকে সর্বপ্রথম ভালো একটি থিম বাছাই করে নিতে হবে, অনেক প্রেমিয়াম টেমপ্লেট রয়েছে এবং ফ্রি টেমপ্লেটও রয়েছে, যেগুলো দিয়ে একটি সুন্দর ওয়েবসাইট আপনি বানাতে পারবেন। যদি কোন প্রিমিয়াম টেমপ্লেট দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করেন তাহলে এটা অনেক ভালো হবে, আর যদি প্রিমিয়াম টেমপ্লেট নিতে না চান তাহলে অসংখ্য ফ্রী টেমপ্লেট রয়েছে যেগুলো দিয়েও অনেক ভালো মানের একটি ওয়েবসাইট বানানো যাবে।
দ্বিতীয় হচ্ছে প্লাগিন, প্লাগিন দিয়ে আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নতুন নতুন ফিচার এড করতে পারবো। প্লাগিন ব্যবহার করে খুব সহজেই আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নতুন নতুন ফিচার যোগ করতে পারবো। একটি ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট বানানোর জন্য আমাদের ভালো একটা থিম এবং প্লাগিন প্রয়োজন পড়বে।
ওয়ার্ডপ্রেস কেন শিখব?
আপনি যদি একজন ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে ওয়ার্ডপ্রেস শিখতে হবে, কারণ এখন ওয়ার্ডপ্রেস দিয়েই বেশিরভাগ ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়। আর আমরা উপরের লেখা থেকে জেনেছি খুব সহজেই কোডিং যোগ্যতা ছাড়াই যে কোন একটা ওয়েবসাইট বানানো যায় ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে এবং মার্কেটপ্লেসে ওয়ার্ডপ্রেসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
অতএব, একজন ওয়েব ডেভেলপারের জন্য ওয়ার্ডপ্রেস শিখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ার্ডপ্রেস শিখলে ক্লায়েন্টের জন্য অথবা আপনার নিজের বিজনেসের জন্য যেকোনো ধরনের ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন।
ওয়ার্ডপ্রেস এর ক্যারিয়ার
উপরের লেখা থেকে আশা করছি জেনে গেছেন ওয়ার্ডপ্রেস শিখলে কি লাভ হবে এবং এর সুযোগ সুবিধা ও তার ক্যারিয়ার সম্পর্কে । একজন ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে ওয়ার্ডপ্রেস হতে পারে বেস্ট চয়েস। ওয়ার্ডপ্রেসের চাহিদা মানুষের মাঝে এখন দিন দিন বেড়েই চলেছে, আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট বানানো শিখেন তাহলে ভালো ক্যারিয়ার করতে পারবেন আশা করি।
ওয়ার্ডপ্রেস শিখতে কতদিন লাগে?
ওয়ার্ডপ্রেস হল একটি জনপ্রিয় কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CMS), যা ব্যবহার করে ওয়েবসাইট তৈরি করা খুবই সহজ এবং দ্রুত। যদি আপনি ওয়ার্ডপ্রেস শিখতে চান, তাহলে প্রথমে আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি শুধু ওয়েবসাইট তৈরি এবং কাস্টমাইজেশন করতে চান, তাহলে ১-২ মাসের মধ্যে বেসিক শিখে ফেলতে পারবেন। তবে, যদি থিম ডিজাইন, প্লাগইন ডেভেলপমেন্ট বা আরও জটিল কাস্টমাইজেশন শিখতে চান, তাহলে ৩-৬ মাস সময় লাগতে পারে।
আমি আপনাকে ৯০ দিনের একটি রোডম্যাপ দিচ্ছি আপনি যদি এই নিয়মে শিখতে পারেন তাহলে আশা করি ৯১ তম দিনে আপনি নিজেকে একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন।
প্রথম ৩০ দিন (বেসিক শেখা)
- ওয়ার্ডপ্রেস কী এবং কেন এটি ব্যবহার করবেন।
- ডোমেইন এবং হোস্টিং কী এবং কীভাবে কিনবেন।
- লোকাল হোস্টিং সেটআপ (XAMPP বা Localhost)।
- ওয়েবসাইটে ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টলেশন।
- ড্যাশবোর্ডের পরিচিতি।
- পেজ এবং পোস্ট ব্যবস্থাপনা।
- ওয়েবসাইটে থিম ইনস্টল করা।
- থিম কাস্টমাইজেশন (Logo, Color Scheme, Header/Footer)।
- মেনু তৈরি এবং সেট করা।
- হোমপেজ তৈরি করা।
- About Us পেজ তৈরি করা।
- Contact Us পেজ তৈরি করা।
- পোস্টে মিডিয়া (ছবি, ভিডিও) যুক্ত করা।
- উইজেট এবং সাইডবার কাস্টমাইজেশন।
- সাইটের লেআউট কাস্টমাইজেশন।
- ওয়েবসাইটের রেসপন্সিভ ডিজাইন।
- থিম কাস্টমাইজেশন: ব্যাকগ্রাউন্ড, ফন্ট, এবং লেআউট।
- ফ্রি থিম ব্যবহার করে ওয়েবসাইট তৈরি করা।
- Elementor প্লাগইন ইন্সটল করা।
- Elementor দিয়ে পেজ ডিজাইন করা।
- Elementor দিয়ে হোমপেজ তৈরি করা।
- প্লাগইন ইনস্টল এবং ব্যবহারের প্রাথমিক ধারণা।
- Contact Form 7 প্লাগইন ব্যবহার করা।
- সাইটে ফর্ম যোগ করা।
- ওয়েবসাইটের পারফরমেন্স টেস্ট করা।
- SEO-ফ্রেন্ডলি URL স্ট্রাকচার।
- সাইটে সিকিউরিটি প্লাগইন ইন্সটল করা।
- SSL সার্টিফিকেট ইন্সটল করা।
- সাইটের স্পিড অপটিমাইজেশন।
- সাইটের SEO বেসিক সেট করা।
আগামী ৩০ দিন (মাঝারি স্কিল শিখা)
- প্রোথিত WooCommerce প্লাগইন ইন্সটল করা।
- WooCommerce সেটআপ করা।
- প্রোডাক্ট পৃষ্ঠা তৈরি করা।
- প্রোডাক্ট ক্যাটাগরি তৈরি করা।
- প্রোডাক্টের বৈশিষ্ট্য যোগ করা।
- পেমেন্ট গেটওয়ে (PayPal) সেট করা।
- শিপিং মেথড কনফিগার করা।
- WooCommerce ডিজাইন কাস্টমাইজ করা।
- WooCommerce-এর জন্য প্রোডাক্ট ইমেজ আপলোড করা।
- সাইটে ব্লগ বিভাগ তৈরি করা।
- ব্লগ পোস্ট লেখার জন্য প্রাথমিক টিপস।
- সাইটে ক্যাটাগরি তৈরি করা।
- কাস্টম পেজ তৈরি করা (Portfolio, Service)।
- সাইটের ফন্ট এবং টেক্সট স্টাইল কাস্টমাইজ করা।
- Elementor Pro ব্যবহার শুরু করা।
- সাইটে স্লাইডার যোগ করা।
- সাইটের জন্য গ্যালারি প্লাগইন ব্যবহার করা।
- সাইটে টেস্টিমোনিয়াল এবং রিভিউ যোগ করা।
- কাস্টম ফর্ম তৈরি করা (WPForms)।
- ফর্মে কাস্টম ফিল্ড যোগ করা।
- ইউজার রেজিস্ট্রেশন পেজ তৈরি করা।
- মেইলচিপ বা MailPoet প্লাগইন দিয়ে নিউজলেটার সিস্টেম সেট করা।
- সাইটের ব্যাকআপ তৈরি করা।
- ব্যাকআপ থেকে সাইট রিস্টোর করা।
- সাইটের ট্রাফিক মনিটরিং সেট করা।
- একাধিক পেজ তৈরি এবং সেগুলোর মধ্যে লিঙ্ক যোগ করা।
- ওয়েবসাইটের কাস্টম ফাংশনালিটি অ্যানালাইসিস।
- সাইটের কাস্টম থিমে কনফিগারেশন করা।
- ক্লায়েন্টের জন্য থিম কাস্টমাইজেশন শেখা।
- ডোমেইন হোস্টিং ট্রান্সফার শেখা।
শেষের ৩০ দিন (এডভান্সড শিখা):
- সাইটে কাস্টম প্লাগইন ব্যবহারের অভিজ্ঞতা।
- সাইটের কাস্টম ফিচার তৈরি করা (নতুন পেজ বা ফাংশন)।
- WooCommerce-এর পণ্যের জন্য কাস্টম ফিল্ড তৈরি করা।
- সাইটে ক্যাশিং প্লাগইন ইনস্টল করা।
- প্রোফেশনাল থিম কাস্টমাইজেশন শেখা।
- Elementor দিয়ে সাইটের পৃষ্ঠা আর্কিটেকচার কাস্টমাইজ করা।
- সাইটের SEO কনফিগারেশন উন্নত করা।
- সামাজিক মিডিয়া শেয়ারিং প্লাগইন ইন্সটল করা।
- সাইটের সিকিউরিটি প্লাগইন কনফিগার করা।
- ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে প্রোফাইল তৈরি করা।
- ক্লায়েন্টের প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট শেখা।
- কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CMS) সম্পর্কে ধারণা নেয়া।
- পোর্টফোলিও তৈরি এবং ডিজাইন কাস্টমাইজ করা।
- ক্লায়েন্টের জন্য সাইট ট্রান্সফার করা।
- কাস্টম সাইট ফিচার তৈরি করা (ব্লগ, পোর্টফোলিও)।
- ওয়ার্ডপ্রেস পেইজ লোডিং স্পিড বৃদ্ধি করা।
- সাইটের নিরাপত্তা এবং বর্ধিত সিকিউরিটি ব্যবস্থাপনা।
- কাস্টম সাইট ডিবাগিং এবং সমস্যা সমাধান করা।
- ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ এবং কাজের প্রতিবেদন প্রস্তুত করা।
- সাইটে পেইড প্লাগইন এবং থিম ব্যবহার করা।
- ক্লায়েন্টের জন্য কাস্টম ডিজাইন তৈরি করা।
- একাধিক ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম শিখা।
- ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে সফলতার জন্য টিপস।
- প্রফেশনাল ওয়েবসাইট তৈরি করার পর পরবর্তী স্টেপস।
- WooCommerce-এ পণ্য বিক্রয়ের জন্য কাস্টম ফিচার তৈরি করা।
- ওয়েবসাইট ট্র্যাফিক এনালাইসিস এবং উন্নয়ন।
- ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্রাটেজি শেখা (কিন্তু SEO নয়)।
- ক্লায়েন্টের জন্য ওয়েবসাইট পারফরম্যান্স অপটিমাইজেশন।
- ওয়েবসাইটের ডেটা ম্যানেজমেন্ট এবং অ্যানালাইসিস।
- ওয়েবসাইটের উন্নত কাস্টমাইজেশন এবং ক্লায়েন্টের জন্য প্রোফেশনাল সার্ভিস প্রদান।
এই ৯০ দিনে প্রতিদিন একটি করে নতুন বিষয় শিখলে আপনি একজন ওয়ার্ডপ্রেস এক্সপার্ট হতে পারবেন বলে আমি মনে করি।
এর চেয়ে কম/বেশি সময় লাগতে পারে সেটা নির্ভর করে আপনার ইচ্ছে ও আগ্রহের উপর।
আজকের আর্টিকেল এ পর্যন্তই যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।
Post a Comment